কেন ফাইভারে কাজ পাওয়া পসিবল?
এটা জানা দরকার। অনেকেই বিশ্বাস বা ভরসা করতে পারে না যে
- বিদেশীরা আমাদের কাজ দিবে,
- আমরা আয় করতে পারবো,
- আমরা ডলার পাবো,
- ব্যাংকে শেষ পর্যন্ত টাকা আসবে,
- আমাদেরও একদিন বিয়ে হবে,
- আমরা বনানী গুলশানের রেস্টুরেন্টে বার্গার- স্টেক খেতে পারবো,
- মাসে একটু মন কেমন করলে বেড়াতে নেপালে কিংবা মালদ্বীপ যেতেই পারি।
বিলিভ মি আমরা পারবো।
যদি কাঁথা সেলাই করতে পারি বা যদি বিরিয়ানী রান্না করতে পারি বা যদি ম্যাথ/ইংলিশ/ম্যানেজমেন্ট/ইতিহাসে ৬০ এর বেশি মার্কস তুলতে পারি বা যদি কল অব ডিউটি ১৫০ লেভেল পার করতে পারি বা পাবজিতে ৫০ হিউম্যান মেরে থাকি তাহলে অনলাইনে আয়ও করতে পারবো। খুব ভালোই করতে পারবো।
আমার ইচ্ছা থাকলে, লেগে থাকলে আর 'বেসিক সাধারণ নুন্যতম' কমন সেন্স থাকলেই ফাইভার ফ্রিল্যান্সার, আপওয়ার্কে ভালো করবো। সাইটগুলো বানানোই হয়েছে এভাবে। মন বিষন্ন লাগলে বছরে দুইবার মিশর, মালদ্বীপ, তুরস্ক ঘুরে আসতেও পারবো।
সত্যি সত্যি স্কিল থাকা
যে কাজ অফার করতে চাচ্ছি তার জন্য যতটুকু স্কিল থাকাটা জরুরী ততটুকু থাকা। অনেকেই আমরা আছি স্কিল না থাকলেও ওভার কনফিডেন্ট, 'যা দেখি তাই সহজ লাগে'। সহজ লাগলেও সময় দিতে হবে।
তবে অনেককেই আমি পেয়েছি প্রতিভা- ওভার কোয়ালিফাইড অথচ তারা জানে না। অভাবে ধুকছে।
কখন বুঝবো আমি কাজের জন্য পার্ফেক্ট?
সর্বনিম্ম কমনসেন্স নিয়ে কোন একটা স্কিলের পিছনে ১০০০ ঘন্টা খরচ করলে ধরে নিতে পারি আমি আন্তর্জাতিক মানের কাজ পাওয়ার জন্য তৈরি। কারণ অনেক অনেক বায়ার আছে যাদের এই স্কিলে এতোটা সময় দেয়ার সুযোগ নাই। তাই তারা আপনার থেকে সময়টা কিনে নিবে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা না বললে পোস্ট দেয়াই বৃথা সেটা হলো:
- ওয়েব ডিজাইন একটা কাজ না,
- গ্রাফিক ডিজাইন একটা কাজ না।
- এগুলো মূলত ১৫-২০টা আলাদা আলাদা কাজের সমষ্টি।
- লোগো ডিজাইন একটা কাজ,
- বিজনেস কার্ড আলাদা একটা কাজ,
- UI, UX আলাদা কাজ।
লোগো ডিজাইন বা UI ডিজাইনে কাজ-আয় 'শুরু' করার জন্য ১০০০ ঘন্টা খরচ করা যথেষ্ঠ।
কিন্তু গ্রাফিক ডিজাইন শিখে আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ শুরু করতে ২০,০০০ ঘন্টাও কম হয়ে যাবে। ঐটা শেখার আগে UI ডিজাইনার নিজের টাকায় ৫ বার ওমরাহ হজ্ব করে আসতে পারবে।
অনলাইনে থাকা:
এটা সবচাইতে জরুরী বিষয়।
ফাইভারে দ্রুত ভালো করার জন্য হেডলাইন নিয়ে গবেষণা আর টাকা খরচ করে এসইও মার্কেটিং সব মার খেয়ে যায় অনলাইনে অ্যাকটিভ থাকার কাছে।
টপ লেভেল গোপন কথা বলবো?
টপ লেভেল ফাইভার সেলাররা বেতন-কমিশন দিয়ে লোক রাখে বেশি একটা আইডিতে বেশি সময় ধরে অ্যাকটিভ থাকার জন্য।
গিগ উন্নয়ন:
গিগ ভালো করতে যে শিখতে হয়? এর পিছনে যে সময় দিতে হয় এটা কি আমরা জানি?
মনে হয় জানি না।
কারণ আমি শুরুতে ভেবেছিলাম ফাইভার খুলে বসে থাকলেই আমাকে কাজ দিবে।
যেমনটা ভেবেছিলাম অনার্স পাশ করার পর জাদু হয়ে যাবে। সার্টিফিকেট পাবার সাথে সাথে চাকরীদাতাদের মাথার মধ্যে আমার ছবি ভাসতে থাকবে।
আর তারা আমাকে ফোন করে আমাকে ডাকবে। এমনকি ফোনে না পেলে বাসায় লো পাঠাবে, পুলিশ পাঠাবে, গোয়েন্দা পাঠাবে নিজেরা আসবে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার। চাকরি না দিয়ে তারা থামবে না।
: অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এমনটা হয়নি।
কেউ আমাকে জোর করে চাকরি দেয়ার জন্য কেউ আসেনি।
আমারই দ্বায়িত্ব মানুষকে জানানো যে আমি যোগ্য, আমি ভদ্র, আমি কাজ পেলে ফেলে রাখবো না, আমি সৎ, আমি অমুক অমুক স্কিলের কাজ পারি... আগেও করেছি। এই যে প্রমাণ!
গিগ কিভাবে আপগ্রেড করে?
১.
হেডলাইন ঠিক করতে হবে।
- -- বায়ার যা যা লিখে সার্চ করে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
- -- একটু বড় করতে হবে। কারণ কমন হেডলাইন হয়ে গেলে আমাকে খুজে পাওয়াই যাবে না ভীড়ের মধ্যে।
- -- খুব বড় চাইলেও করতে পারবেন না।
২.
গিগের ডিসক্রিপশনে লিখতে হবে:
- -- বায়ার কি কি পেতে চাচ্ছে, কি পেলে তার লাভ?
- -- আমি কেন কাজটার জন্য যোগ্য? আমি কোত্থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসছি?
- -- আমি কেন কাজটার জন্য যোগ্য? আগে আমি কোন কোন কাজ করেছি?
- -- যা পড়লে গিগটা সে কিনবে সেগুলো লিখতে হবে। আমার জন্মকুষ্ঠি, আমার উচ্চতা, আমি দেখতে ফর্সা আমার নাক বোঁচা এসব লেখার দরকার নাই।
৩.
প্রাইস যুক্তি সংগত হতে হবে।
- -- বেশি দাম লিখলে কাস্টমার নিবে না। খুব বেশি টাকাওয়ালা কাস্টমার ফাইভারে আসেই না।
- আর ঐ টাকার জন্য কি আমার প্রোফাইল, আমার মার্কেটিং, আমার কাজের স্যাম্পল, পোর্টফোলিও যথেষ্ঠ আছে?
- -- খুব কম দাম লিখলে ক্যারিয়ার লস, টাইম লস, কাজের রুচি নষ্ট, ফাইভারের চোখেও ধরা। বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু দরকার হলে না খেয়ে থাকবে তাও ১০ টাকার বিরিয়ানী খাবে না।
৪.
কেমন দামে কি কি দিবো?
- -- এটা খুব যত্ন করে সাজাতে হবে।
- -- আনলিমিটেড রিভিশন লিখবো না। অন্তত ২০০ ডলারের কোন কাজেতো লিখবো না।
বাবা-মার নির্যাতনের শিকার কিছু কিছু সাইকো টাকা দিয়ে মানুষকে প্যারা দেয়ার জন্য অনলাইনে ঘোরে। কাজ নিয়ে অনেক ঘন্টা সময় নষ্ট করার পর, খুব প্যারা দেয়ার পর আমাকে রিপোর্টও মারবে, টাকাও দিবে না।
৫.
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত অ্যাকটিভ থাকা।
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে (যারা অনুমতি দেয়), লিংকডিনে, টুইটারে, ড্রিবলে, রেডিটে, ফোরামে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের কাজের স্যাম্পল দেখিয়ে সাথে গিগের লিংক দিয়ে রাখা।
-- এটা করলে ওখান থেকেও কাজ পাবো, আবার ফাইভারও আমার গিগকে উপরে তুলে দিবে গুরুত্ব দিয়ে।
৬.
আরেকটা সিক্রেট বলি:
গিগ সাজানোর ব্যাপারে হেল্প নেয়া যায় এটা কি জানি?
অনেক এসইওএক্সপার্ট আছে যাদের গ্রাফিক বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কিংবা অ্যাকাউন্টিং এর স্কিল নাই। এই ফেসবুকের গ্রুপগুলোতেই আছে। তাদেরকে খুজে বের করে নিজের কাজ দেখান। ইনশাআল্লাহ একটু মানিয়ে নেয়ার কষ্ট একা একা অনাহারে থাকার কষ্টের চাইতে অনেক কম।
সময় ম্যানেজ করা:
টাইম ম্যানেজমেন্টটা খুবই জরুরী।
- প্রতিদিন রেগুলার ৮ - ১০ ঘন্টা সময় দিতে হবে ফাইভারকে।
- প্রতিদিন ৬ -৭ ঘণ্টা ঘুম জরুরী।
- দিনে সম্পূর্ণ ১টা ঘন্টা বাবামাকে সময় দিতে হবে।
- দিনে ১টা ঘন্টারও বেশি সময় বউ-বাচ্চাকে দিতে হবে।
- দিনে ১টা ঘন্টার মতো সময় এলাকায় দিতে হবে। মসজিদ বা এলাকায় প্রতিবেশীদের পিছনে খরচ করা দরকার। (সামাজিক কাজে বাবা-মা-বাচ্চাকে নিয়ে বের হলে এখানে সময় সাশ্রয় করার চান্স আছে)
- দিনে দুই বারে ৪০ মিনিট ব্যায়াম স্ট্রেচিং এ দিতে হবে। (বউ-বাচ্চাকে সাথে নিয়ে করলে সাশ্রয় আছে)
ব্যাকআপ প্ল্যান:
ফাইভারে ভালো করতে হলে ফাইভারের বাইরেও কিছু করার জন্য তৈরি হতে হবে।
- নিজের স্কিল আপগ্রেড করতে হবে। নিয়মিত কিছু খরচ করতে হবে।
- নিজের ফেসসবুক ও লিংকডিন পেজ ভারী করতে হবে। যেসব কাজ করছি সেগুলো নিয়ে পোস্ট দিতে হবে।
- নিজের ওয়েবসাইটের পিছনে খরচ করতে হবে।
- অল্প অল্প ইনভেস্ট করে এলাকায় কোন ব্যবসা বা উদ্যোগ তৈরির চেষ্টা করতে হবে।
অন্যায় না করা:
- ফাইভারকে না বোঝাটাই অন্যায়। বুঝতে হবে পড়তে হবে, জানতে হবে, শিখতে হবে।
- আমার দৃষ্টিতে চোখে ঠিক আছে, কিন্তু ফাইভার টের পেলে অভিমান করবে এমন জিনিসগুলো না করা।
- কি করলে ফাইভার মন খারাপ করবে এমন জিনিসের কিন্তু বিশাল একটা লিস্ট ফাইভারের কাছে আছে। বড় ভাইয়া আপুরাও বার বার বলছে এগুলো থেকে সাবধান থাকার জন্য।
নিয়মিত স্কিল আপগ্রেড করা:
দুনিয়া বদলাচ্ছে। খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে আর আমার স্কিলকেও বদলাতে হবে।
হ্যাপি ফ্রিল্যান্সিং... ফাইভারিং। আসসালামু আলাইকুম।
0 Comments