অত্যাধুনিক নেকড়ে ও ভেড়ি সুন্দরী



একদিন ঘুরতে ঘুরতে এক নেকড়ে একটা দলছাড়া ভেড়াকে একলা পেয়ে গেল। 
তখনই ঝাপিয়েই পড়তো, কিন্তু দেখে কি ভেড়ার ছানাটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সরাসরি ঝাপিয়ে পড়তে নেকড়ের খুব চক্ষু লজ্জাবোধ হলো। তাই ভেড়াটার উপর সরাসরি কোন হামলা চালালো না। বরং কাছে যেয়ে শুরুতে কিছু যুক্তি-তর্ক লজিক দিয়ে সেটাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো, 
ভেড়াটাকে খাওয়ার ব্যাপারটা নেকড়ের হক্ব, ভদ্রতার মধ্যেই পড়ে। এটাই উচিত।

সে ভেড়াটাকে বলল,
"আব্বে ঐ চিকনি মাটন রেজালা! তোকে আমি খেয়ে ফেলতে চাই। তাড়াতাড়ি শান্ত হয়ে মুখে এসে বোস।''
ভেড়াতো আকাশ থেকে পড়লো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, 
''বলেন কি? কেন? আমাকে খাবেন কেন? আমি কি করেছি? ছোট্ট একটা ভেড়া...''
“দেখ ভেড়া তোর ড্রেসআপ ভালো না, সাজগোজ খারাপ। তোর ফোলানো ফাপানো মাংস যথেষ্ট উস্কানীমূলক। দেখে লোভ সামলানো সম্ভব না।"

ভেড়ার ছানাটার কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“কিন্তু আমিতো আসলে সোয়েটার পড়ে আছি, আমার পুরো শরীরে অথেনটিক ন্যাচারাল উলের বোরখা দিয়ে ঢাকা।"


নেকড়ে রেগে বললো,
“তুই শালা আমাকে গত বছর ফুটবল বিশ্বকাপের সময় অনেক অপমান অপদস্ত করেছিলি। বলেছিলি ব্রাজিল ভালো না।"

ভেড়াটা ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল,
“কিন্তু, আমার তো গত বছর জন্মই হয়নি!”

নেকড়েটা হকচকিয়ে গিয়ে বলে,
“হতে পারে। কিন্তু, আমার এলাকার চটপটি খাস, ফুচকা খাস, কাচ্চি খাস। ”




“না স্যার,”
ভেড়া উত্তর দেয়,
"বাইরের চটপটি ফুচকায় তো ময়লা পানি দেয়, আমি কক্ষনো খাই না। তা ছাড়া আমি ভেড়া হয়ে কাচ্চি খাওয়াতো... "

নেকড়ে ছাড়ে না,
"অবশ্যই বিরিয়ানী খাস, খেয়ে খেয়ে বিশ্রি টিকটক করিস, ফুড ভ্লগ করিস! বিরিয়ানী ছাড়া এই ফিগার হয় কখনো?"

ভেড়াটা আপ্রাণ বোঝাবার চেষ্টা করেন,
"নাউযুবিল্লাহ স্যার, বিশ্বাস করুন স্যার, এই বিরিয়ানী খেতে কেমন তাইতো আমি জানি না এখনো।"

নেকড়ে আর সহ্য করতে পারছিলো না, 
“তুই আমাদের পাড়ার বার্গারতো ঠিকই খাস। তোর জ্বালায় দোকানে যখন যাই, বার্গার নাই।”
“না, না,” আর্তনাদ করে ওঠে ভেড়াটা,
“আমি এখনো এক ফোঁটাও বার্গার মুখে দিইনি। আমিতো এখনো শুধু হরলিক্স আর মিল্কভিটার দুধ খাই!”

নেকড়ে ততক্ষনে আরও হিংস্র হয়েছে। ঝগড়া করতে করতে তার ক্ষুধাও বেড়ে গেছে। ভেড়ার মাংসের ঘ্রানে দিশেহারা,
“হুম! তাতো ঠিকই বলেছিস, কিন্তু, তা এগুলো বললে আমার মনের ক্ষুধা মিটবে?”

ভেড়াটা তখন যুক্তি দেখায়, চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“কেন আমাকে শুধু শুধু খেতে চাচ্ছেন? বাজার থেকে কিনে মাংস খেতে পারেন না? আপনার ঘরে কি মাংস নাই? ফ্রিজে মাংস নাই?

নেকড়ে খেঁকিয়ে ওঠে,
“ না, নাই।”

ভেড়া তখন ভয় পেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কেন নাই? আপনিতো বড় ব্যবসায়ী, দোকান ভর্তি অনেক মালামাল।”

“কারণ মাল থাকলেও বিক্রি নাই।”
এই বলতে বলতেই ভেড়াটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো হিংস্র লোভী নেকড়েটা। আর তাকে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলল।
.

মোরাল: বিক্রি না থাকলে ভদ্রতা কাজ করে না

0 Comments